Sunday, March 26, 2023

তুই যদি প্ৰিয় কোন গান হতি




   এখানে নদী বাঁক নিয়েছে । শান্ত জল । অন্ধকার চারিদিক। পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি , আমরা কোন কথা বলছি না । পেছনে ঝিঁঝিঁ আর ব্যাঙের বুকচেরা চিৎকার ভেতরটা ফাঁকা করে দিচ্ছে। এভাবেই আমরা এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম ঠিক আট ঘণ্টা আগে । এখন রাত ২: ৩০ । আমি সিওর তুই ঘুমোস নি , গাঁজা টেনে শূন্যে মেঘেদের সাম্রাজ্যে আছিস । তোরও কি এই মধ্যরাতে মনে পড়ছে আমার কথা ?


     আগের রাতে ঘুমিয়েছি ওই চারটে । বহুদিন পর তোর ফোন এলো সাড়ে চারটে সময় । ব্যস স্ক্রিনে তোর নাম দেখে ঘুম গেল মর্নিং ওয়াকে । একি কাঁদছিস কেন ? আচমকা বিদ্যুতের মত উড়ে এলো আবদার । আমায় একটা দিন দিবি ? না করা আমার সাধ্যে ছিল না । তারপর ? তারপর শুনবেন ! 


   তারপর আমার পক্ষীরাজ রেডি ডানা মেলার জন্য । ন্যাশনাল হাইওয়ে ধরে সে উড়ছে । পরের শহরে পৌঁছে সে পিঠে চাপিয়ে নিল রাজকন্যাকে । হা হা তা বলে আমায় আবার কোন রুপকথার যুবক ভাববেন না । যাইহোক , আমরা ভর দুপুরে নদী পাড়ে গেলাম , রোদের তেজে ফিরেও এলাম । আরেকটু এগিয়ে একটা গ্রাম , আরেকটা গ্রাম তারপর আরো একটা পেরিয়ে ইউক্যালিপটাশ ঘেরা ঝিল । নীল জল । দুজন ঘাটে বসে মাছ ধরছে , এক মহিলা বাসন ধুচ্ছেন । তোর ঠোঁটের সিগারেটে আমি আগুন দিলাম । ধোঁয়া উড়ে যাচ্ছে উপরে । আমার চোখে চোখ রেখেছিস কিন্তু কিছু বলছিস না । কি দেখছিস ? আমার চোখে দিগন্তবিস্তৃত মাঠ আছে ,আছে জঙ্গল , আছে কমলা রাস্তা , আছে তোর চুলের মত ঢেউ খেলানো নদী আর কলেজ ডুব মারা দিনের বোহেমিয়ান সময় । এবার তাকালি ঝিলের দিকে । নীল জল , ভাসমান কটা হাঁস । তোর ঠোঁট স্পর্শ করা সিগারেট আমার ঠোঁট ছুঁলো । আমরা আরেকটু মনের এবং আরেকটু ধ্বংসের কাছাকাছি এলাম । কেন ডাকলি ? কেন কাঁদছিলি ? কেনই বা আমরা এখন প্রকৃতির এত কাছাকাছি ? সব কেনর উত্তর হয় না । এই পাশাপাশি বসা , এই নিরবতার থেকে যথার্থ শব্দ সত্যিই আমাদের কাছে নেই বিশ্বাস করুণ । শুধু তার হাতে হাত রাখাটাই মুহূর্ত । আর সেই কলেজবেলার মত করে সে গেয়ে উঠল –    

Suzanne takes you down to her place near the river

You can hear the boats go by 

You can spend the night beside her


   আমি জলের দিকে তাকিয়ে আছি । ফ্ল্যাশ ব্যাকে ভেসে উঠছে একটা রোদ মাখা রাস্তা , পাশে ঘুপচি চায়ের দোকান । বাস থামল । নামলি , অন্যান্য দিনের মত সেদিনও দেখিস নি । প্রতিদিনের মতই জিন্স – কুর্তি , কাঁধে সাইড ব্যাগ । হেঁটে যাচ্ছিস কলেজের গেটের দিকে । 

 And you know that she’s half crazy 

 But that’s why you want to be there…


      গানটা থেমে গেল । হাত থেকে হাত সরিয়ে বলল - চল জঙ্গলে যাই । আমরা আবার চললাম । কলেজ ছাড়ার আজ এত বছর পর আমরা আবার কেন দেখা করছি ! জানি না । দুদিকে অসংখ্য সবুজ রেখে এগোচ্ছি । আজ আমার জঙ্গল ভালো লাগছে না । সব সবুজেরই যেন এক রঙ , পাখির ডাক কান পেরিয়ে মনে গিয়ে লাগছে না । তার নরম পারফিউমকে অগ্রাহ্য করে জঙ্গলের বুনো গন্ধ নিতে পারছি না । আমাদের দুজনের ঠোঁটে সিগারেট জ্বলছে , মাটির রাস্তা ধরে চলেছি , জঙ্গল ঘন হচ্ছে । সে কানের কাছে খুব আসতে গান ধরেছে , তার স্বর কান হয়ে মনের গভীরে প্রবেশ করছে সিগারেটের ধোঁয়ার মত আর মুগ্ধতায় আমার চোখ বুজে আসছে – 


                   

    and you want to travel with her 

    And you want to travel blind 

    And you know that she will trust you 

        For you’ve touched her perfect body with your mind


     এই !!!!!!!! বলে সে আমার কোমরে চাপ দিতেই কোন রকমে কন্ট্রোল করেছি । আরেকটু হলে একটা গাছে ধাক্কা মারতাম । আমার পক্ষীরাজ থেকে নেমে ঠোঁট থেকে মাটিতে পড়ে যাওয়া সিগারেটটা তুলতে যাব সে বলল , তুলছিস কেন ? ফেল । আরেকটা দিচ্ছি ধরা বলেই নিজেরটাও ছুঁড়ে দিল । আমরা হেসে উঠলাম দুজনই । সে গাড়ি স্টার্ট দিল আমি পেছনে বসলাম । কি রে মনে মনে কার শরীর ছুঁয়ে ফেললি ? বলেই আবার হেসে ফেলল । আমরা শহরের দিকে যাচ্ছি । এখন পিচ রাস্তা , দুদিকে শাল গাছ । হাওয়ায় তার এলোমেলো চুল আমার মুখ ছুঁয়ে যাচ্ছে , আর পারফিউম ছুঁচ্ছে চেনা স্মৃতি । এবার আমি তার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে গাইছি – and jane came by with a lock of your hear… 

 


   ভীষণ বোর হচ্ছেন বলুন ? আচ্ছা মাঝের কিছুর সিন কেটে বাদ দিলাম । সামনে ইউনিভার্সিটি । ও বলল – দেখ এক ঝাঁক সুন্দরী আসছে , আমি ওদের সামনে গিয়ে ব্রেক মারি কি বলিস ? আমি বললাম - তারপর ? তারপর আবার কি তুই সেই jannat এর মত দু হাত হাওয়ায় ভাসিয়ে দিবি আর আমি গেয়ে উঠবো ও ও ও ওও ও ওও ও… । হ্যাঁ তারপর একটা জুতো উড়ে আসুক তাই তো ! আমাদের দুজনেরই মুখে সিগারেট আর এভাবে হাসছি দেখে সেই এক ঝাঁক মেয়ে আমাদের দিকে হা করে টিপিকাল ভাবে তাকিয়ে আছে । আমরা হাসতে হাসতে আরো কিছুটা এসেছি । সূর্যের আলো নিভে আসছে । এবার আমি বললাম - চল নদী পাড়ে যাই ।  


    চারিদিক অন্ধকার । নদী এখানে বাঁক নিয়েছে । শান্ত জল । আমরা উঁচু পাড়ে দুজন দুজনের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছি । নদীর দিকে মুখ । আরেক হাতে দুজনেরই বিয়ারের বোতল । আমরা কোন কথা বলি নি । আন্ধকারে নিরবতা চিরে শুধু আসছে ঝিঁঝিঁ আর ব্যাঙের ডাক আর বুকের ভেতরটা কেমন ফাঁকা করে দিচ্ছে । একটু আগে নদীর ওই পাড়ে দেখা যাচ্ছিল পুরনো মন্দিরের জীর্ণ চূড়া । সেই কবে থেকে যে দাঁড়িয়ে আছে ঠিক আমাদের মত । এই যেমন আমরা এত কাছাকাছি আসি , হৃদস্পন্দন শুনি অথচ কেউ কাউকে কিছু বলতে পারি না । অবশ্য শত দূরত্ব থাকলেও বুঝে ফেলি একে অপরকে । এক ঘণ্টা আমরা এখানে ছিলাম কিন্তু একটাও কথা বলি নি । তাকে বাড়ি ছেড়ে আমি হাইওয়েতে । এখন রাত ২ : ৩০ । আমার হৃদয়ে তার হাসিমুখ । অন্ধকার ঘরে নীল আলোয় ব্লুজ বাজছে । আমি গুন গুন করছি – 


“আকাশে তোমার গন্ধ ভাসে 

আমি অন্ধ হতে চাই

 আমার শরীর তোমার স্পর্শ খোঁজে 

তোমায়, কেবল তোমায় খুঁজে যায় ।“


  আমি জানি তুই এখন গাঁজা টেনে শূন্যে । খাটে আধশোয়া অথবা ব্যালকনিতে আরামকেদারায় । অনন্যা , আমি যেমন তোকে , তুইও কি এ মধ্যরাতে আমাকেই মনে করছিস প্রিয় ?  


@ রোহন নাম্বিয়ার ।

Tuesday, March 21, 2023

নিঃসঙ্গতার দিনলিপি

ছবি - জয়শ্রী বেরা 


 সামনে যতদূর চোখ যাচ্ছে শুধু মাঠ । আমার প্রায় পাঁচশো মিটার পেছনে একটা বিশাল উঁচু মিউনিসিপ্যালিটির তীব্র আলো । সেই আলো ক্রমশ ফিকে হতে হতে অনেক দূরে মিলিয়েছে ,সেই  আবছা আলোয় আকাশ থেকে মাঠ স্পর্শ করেছে ধোঁয়াশার চাদর । আমার লেখাগুলো কেমন শুধু মাঠ, জঙ্গল , রাস্তা , মেয়ে এসবেই আটকে যায় বলুন ! 


   অথবা একা একা নিরিবিলিতে ঘুরছি তাই না ?  যদি আজ নিসঙ্গতার কথা বলি ? পড়বেন ? দেখুন আমি মিথ্যে ভাউতাবাজি করব না । বলব না যে , কেউ পড়ল কি না পড়ল তাতে আমার বয়েই গেল । বলব না আমার লিখেই সুখ , লেখার জন্যই লিখি । বরং আপনারা পড়লে ভালো লাগে । আসলে তাই যদি না হত তাহলে সত্যি বলছি ফেসবুকের বদলে গোপনে ডায়রি লিখতাম । 


   দেখেছেন , আবার অযথা বকবক করছি । এই যে নিরিবিলিতে ঘুরি , একা গা ঢাকা দিয়ে ফেলি মাঝে মধ্যে । আসলে তো আমরা সকলেই ভীষণ নিঃসঙ্গ তাই না ? ভাবুন আড্ডায় আছি , হটাৎ কোন কথা কানে যাচ্ছে না , চলে গেছি অন্য কোথাও । ভাবুন সোশ্যাল মিডিয়ার স্ক্রোলের মতই কি  নিঃসঙ্গ নই আমরা ? এই যে মাঝরাতে তোমার ইনবক্সে বা তুমি কারো ইনবক্সে ভিড় বাড়াচ্ছ ! এত ভিড়েও দেখো আদপে তুমি কাউকেই চেনো না । নিজেকেও চেনা হতে দাও নি কারোর কাছে । এই ভীষণ ভিড় ঠেলে কখনো মনে হয় নি পালিয়ে যাই ! পালাবে ? চলো একসাথে হারিয়ে যাই । যদিও একসাথে বলে তো কিছু হয় না প্রিয়। সেই তো তুমি এবং আমি কেউই কারো চিন্তা ছুঁতে পারব না । 


    আমার সামনে রুপোলী ধোঁয়াশার চাদর । কেউ নেই , কোন পোকা বা ব্যাঙের ডাক নেই , গাছের পাতার শব্দ নেই । শীত নেই , গরমও নেই । এমনকি আজ ফোনটাও আনি নি। হয়ত ঘরে রিংটোন বেজে বেজে ক্লান্ত ফোনের ওপারে তুমি আমায় খুঁজছ । শুধু নিজের হৃদস্পন্দন আছে । আমাদের প্রজন্মের বছরের পর বছর ধরে ডিগ্রি আছে , আছে ফর্ম ফিলাপ আর পরীক্ষা , কারো কারো পার্টির ঝাণ্ডা ও জয়েনিং লেটার আছে । কারো কিছু হতে চাওয়া ছিল , কারো কিছু হতে না পারা আছে । আমাদের বুকে কখনো শেষ না হওয়া একটা রাত আছে , যে রাতে মুখ না দেখিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়ানো আছে । আপনাদেরও তো কত কথা বুকে গোপন করে রাখা আছে । তাই না ? 


  আমরা ডানা চেয়েছিলাম কিন্তু মধ্যবিত্তের শেকড় পেয়েছি । আমরা প্রেম চেয়েছিলাম , বেলা বোসের ট্র্যাজেডি পেয়েছি । আমরা মধ্যবিত্তের যে শেকড় পেয়েছি , তা আঁকড়ে থাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু না , আমরা গুজরাট আর ব্যাঙ্গালোরে পৌঁছেছি । যাইহোক চাওয়া আর না পাওয়াগুলোকে ছাল ছাড়ানো ছাগলের মত আমার ফেসবুক ওয়ালে টাঙ্গিয়ে দিই , কেমন ? 


  আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি মনে আছে নিশ্চয় ! আমি কিন্তু ভুলে গেছি । সামনে তাকাতেই দেখি ধু ধু মাঠ , আকাশ থেকে মাঠ ছুঁয়েছে ধোঁয়াশার চাদর । এতকথা বলতে বলতে দূরে মাঠের মাঝখান দিয়ে যে রেললাইন গেছে , সেখানে একটা মাল গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়েছে । আমি দাঁড়িয়ে আছি , কতক্ষণ থাকব জানি না । সামনে আবছা আলো জীবনের মত । 


আসলে ভেবে দেখুন কোন ভীষণ নির্জনে দাঁড়িয়ে পড়া  মাল গাড়ির গার্ডের মতই কি নিঃসঙ্গ নই আমরা ? 


@ রোহন নাম্বিয়ার ।

Thursday, March 9, 2023

উড়ে যায় পাতা বসন্ত বিকেলে

 

ভীষণ শীত করছে । আমার ভেতরটা কোল্ড-স্টোরেজের মত ঠাণ্ডা । অথচ দেখো এটা বসন্তের বিকেল । স্টেশনের চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে পড়ে আছে কিছু বিক্ষিপ্ত পাতা । কিছু শুকনো ঝরা পাতা এখনো মাটি স্পর্শ করেনি , উড়ছে । তুমি ট্রেনের লেডিস কম্পার্টমেন্টের দরজায় , আমি দরজার হাতল ধরে প্ল্যাটফর্মে । আমি চাই তুমি পরের ট্রেনে যাও আর তুমি কিছুতেই এই ট্রেনটা মিস করতে নারাজ    হুইশেল । এক পা পিছিয়ে গেলাম । আমার খুব সামনে দিয়ে চলে গেল ট্রেন। চলে গেলে তুমি । আমার পা কাঁপছে , শীত করছে খুব । হয়ত আমাদের আর দেখা হবে না । একটা অলিখিত পূর্ণচ্ছেদ পড়ে গেল । এটা শাহরুখের কোন হিন্দি সিনেমা না । বুঝলে বন্ধু !

   অনেকক্ষণ স্টেশনেই ছিলাম । কতক্ষণই বা আর থাকব ! অগত্যা একটা সময় বেরোলাম । একটু নিরবতা দরকার । বাইক ছুটিয়ে চলে এসেছি কাছেই একটি গ্রামে । আচমকা নিজের নাম শুনে পেছন ফিরেছি । দেখি এক বন্ধু আর এক বান্ধবী । পিচের রাস্তা , দুইদিকে সারিবদ্ধ শাল গাছ । গাছের পাতাদের পেছনে আধখানা চাঁদ । মনে পড়ে গেল আমি একসময় এরকমই চাঁদ দেখে আচমকা তোমাকে মেসেজ করতাম – চাঁদটাকে তুমি দুই ভ্রুর মাঝে যত্নে বসিয়ে নিও । একবার জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাও । দেখো মনে পড়ছে ? চেষ্টা করবে চাঁদকে আজ দুই ভ্রুর মাঝে বসানোর ?

   আমার বন্ধুর ফোনে “আমি চিনি গো চিনি তোমাকে , ওগো বিদেশিনী” বাজচ্ছে । আমরা তিনজন গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে আছি । খুব কম আলোয় আমরা কেউ কারো মুখ দেখতে পাচ্ছি না । চুমুকে চুমুকে সময় কাটছে । আমার ভেতরে এখনো শীত । পরিবেশে বসন্ত । আমরা হাঁটছি । কিছুদুর আসার পর বনদেবীর মন্দির । মন্দির বলতে বিশাল গাছতলায় কিছু প্রতিমা রাখা , পুজো হয় । রাতে কোন আলো জ্বলে না । এখানেই বসে রইলাম অনেকক্ষণ । কেউ কোন কথা বলছি না । ওরা টের পাচ্ছিল আমার শীতভাব , টের পাচ্ছিল আমি শীতঘুমের জন্য গর্ত খুঁজছি ।

   আবার আমরা হাঁটা শুরু করেছি । ওরা কোন সান্ত্বনা দেয় নি , কোন মন ভোলানো কথা বলে নি । শুধু মনের স্পর্শ মনে রেখেছে । মাতিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে । ওরা হটাৎ নাচা শুরু করেছে , আমিও যোগ দিয়েছি । গান চেঞ্জ হল – I would never fall in love again / until I found her… বান্ধবী হাত বাড়িয়েছে । আমি এগিয়ে এসেছি । ওর একটা হাতে আমার হাত , আরেকটা হাত আমার কাঁধে । আমার একটা হাতে ওর হাত আর আমার আরেকটা হাত ওর কোমরে । দুদিকে গাছ , মাঝে রাস্তা , মাঝ রাস্তায় আমরা নাচ করছি । অথচ দেখো মনে মনে তোমাকেই ছুঁয়ে ফেলছি  । মাথার ওপর চাঁদ । তুমি কি চাঁদ দেখছ ? দেখে কি কিছু ভাবছ ?

  আমার ভীষণ শীত করছে । বাইরে বসন্ত , ভেতরে বরফ । কিছুতেই ভেতরের এই কাঁপুনি কমছে না , কমাতে পারছি না…

 

@ রোহন নাম্বিয়ার ।

Sunday, March 5, 2023

কুয়াশা মাখে শহর

 স্ট্রিট লাইটগুলো জ্বলছে । আলো আসবে আসবে করলেও অন্ধকার এখনো বাড়ি ফেরে নি । রাস্তার দুই দিকে কিছু কিছু বড় গাছ , গাছের ফাঁক দিয়ে ধোঁয়াশা চিরে স্ট্রিট লাইটের আলো আসছে। এ আমার শহরের শীত ভোর । আমি আরো একটু হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেলাম । একটা নরম ভাব চারিদিকে । একজন বয়স্ক ভদ্রলোক ক্রশ করলেন । একটি দুধের গাড়ি বেশ জরেই ছুটে গেল । আমি হাঁটতে বেরোই মনের তাগিদে তাই একটু আসতে আসতেই হাঁটি প্রিয় পদ রসিয়ে রসিয়ে খাবার মত । একটা ঠাণ্ডা হাওয়া শরীর ছুঁয়ে গেল । প্রিয় , তুমি কি লেপের তলায় আদুরে ভঙ্গিতে পাস ফিরলে ? 


দিনের প্রথম ট্রেন হুইশেল দিচ্ছে । সবজিওয়ালা , মাছওয়ালারা সাইকেল ছুটিয়ে বাজারের দিকে আর টলিওয়ালারা স্টেশনের পথে যাচ্ছে । কারোরই ব্যস্ততা নেই , এ ভোরে সবাই প্রানভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে , এ ভোরে সবাই এগিয়ে যাচ্ছে জীবনের দিকে মুগ্ধতা নিয়ে । হাঁটতে হাঁটতেই আমি এই বাজে বকবকগুলো আপনাদের শোনাই কেমন ! 


 

একটু আবছা আলো এসেছে বুঝলেন ! কিছুটা দূরে কুয়াশার চাদর । একটি মেয়ে সেই কুয়াশার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে । পরনে ট্র্যাক শুট । ছুরির মত ধারাল ফিগার । উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণ , চোখে গত সন্ধ্যার আবছা কাজল । একটা অদ্ভুত স্নিগ্ধতা লেগে আছে ওর গায়ে । বেশ জোরেই হেঁটে গেল পাশ দিয়ে । আমি পেছন ফিরে না দেখে পারি নি । একটা স্নিগ্ধ ভোর হেঁটে গেল । সেও কি পেছন ফিরবে ? না না বাহাদুরি করে মিথ্যে বলব না । সে পেছন ফিরে তাকায় নি । ভালোই হয়েছে বলুন ! কুয়াশা মেখে এমন নরম সকালে মায়াবী চোখে সে যদি তাকাত আমার সাথে সাথে আপনারাও কি ক্লিন বোল্ড হতেন না ? 


একটু চা হলে কেমন হয় ! এক কাপ চা আর একটা সিগারেট ধরালাম । আলো এসে গেছে , আমিও শহরের ব্যস্ত রাস্তায় । মানুষজন আর স্কুল বাসেদের আনাগোনা শুরু , শুধু হর্নের বেয়াদপি নেই । আমার উল্টোদিকে একটি পুচকে বাচ্চা মেয়ে তার বাবার হাত ধরে লাফাচ্ছে আর হাত তালি দিচ্ছে , একটি বাচ্চা ছেলে ঘুম জড়ানো চোখে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে । উঠি এবার বাড়ি ফিরব । এমন সকালে তোমাকে কি একবার গুড মর্নিং বলব ফেসবুকে ! 


এই রে বাজে বকতে বকতে ভুলেই গেলাম চকলেট কেনা হয় নি । চকলেট কিনে পরের মোড়ে যেতেই আট বছরের মেয়েটি খিলখিল করে হাসতে হাসতে হাত পাতল । ওদের ফুল দোকান । দাদা আজ একটা অন্য জিনিস আছে । পেছনে রাখা হাতটা সামনে আনতেই দেখি একটা নীল গোলাপ । ওর নাম রোদসী । সেই পুচকে বয়স থেকেই ও আমার শীতের সকালের মিষ্টি রোদ । এই কি তুমি এই  শীতের সকালে কার কথা ভেবে ঘুমের ঘোরে লজ্জা পাওয়া ঠোঁটে মুচকি হাসলে  ?


@ রোহন নাম্বিয়ার ।

Saturday, March 4, 2023

পক্ষীরাজের ডানা ছুঁয়ে যায় মেঘ

 মাথার ওপর নীল আকাশ , যদিও আমার চোখে নীল চশমা । পক্ষীরাজ ! মানে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি । না , কোন ঘুমন্ত রাজকন্যাকে জাগিয়ে জানলা দিয়ে উড়ে কোন শূন্যে হারাবো না । হা হা সে সাহসও নেই । নাহলে সুন্দরী কন্যাদের পাশ দিয়ে হাঁটার সময় কথা বলা তো দূরে থাক , চোখ তুলে তাদের দেখাও হয় নি । যাক গাঁজাখুরি কথা থাক । 

আমার শহরে কান পাতলে পাখি ডাকে না , চোখ মেললে সবুজ মাঠে আটকে পড়ে না দৃষ্টি । আমি সারাক্ষণ হর্ন শুনি , দেখি ভিড়ে ঠাঁসাঠাসি মানুষ আর কালো ধোঁয়া গিলি । এই নিয়ে মনে কীভাবে নরম হাওয়া লাগাই বলো তো ?  

তোমার মুখ ভাবতে ভাবতে । তুলি দিয়ে আঁকা তোমার মুখ ভাবতে ভাবতে অনেকটা হাইওয়ের রাস্তা পেরিয়ে এসেছি । এখন সামনে জঙ্গল । রাস্তার দুই পাশে গাড় সবুজ রং। জঙ্গলের গন্ধটা আমাকে কেমন ফ্রেশ করে দিচ্ছে । সবুজ পাতাদের ছুঁয়ে সবুজ হাওয়া যেন তুমি আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত রাখছ । আমি এগোচ্ছি । তুমি ফোন করলে । আমি ধরলাম না । তোমার সাথে কথা বলতে গিয়ে আমি তোমার আদিমতা , তোমার বন্যতা হারাতে চাই না । ডান পাশে একটা কমলা রঙের রাস্তা নেমে গেছে । সেই রাস্তাটা ধরলাম । এগোচ্ছি । এগিয়ে চলেছি । জঙ্গল ঘন হচ্ছে । শীতের কমলা ধুলো উড়ছে । কতদুর যাবো জানি না । জানি আমার কীর্তিকলাপ নিয়ে তোমার খুব অভিমান । কিন্তু আমার কিছু করার নেই । আমার এই গন্তব্যহীন বেরিয়ে পড়া আমাদের গন্তব্যহীন সম্পর্কের মতই তাই না ? 

@ রোহন নাম্বিয়ার

ঠিক প্রেম প্রস্তাব না

 ঘুমিয়ে পড়েছ ? শহরের বুকে রাত নেমে আসে , কিছু তারা স্থির । আজ এই মধ্যরাতে নীলচে আলোয় একলা রুমে মন টিকছে না । একের পর এক গজল চলছে । আমি ভেসে ...